Latest News

Powered by Blogger.

Adv

Jiaganj-Azimganj

The most popular and twin town is Jiaganj-Azimganj town under Jiaganj-Azimganj Municipality of Murshidabad district.

Adv

Jiaganj

by Biswajit Das  |  in jiaganj town at  11:48

জিয়াগঞ্জ

     ভূমিকাঃ পশ্চিমবাংলার একটি গুরুত্বপূর্ণ জেলা হল মুর্শিদাবাদ , আবার মুর্শিদাবাদ জেলার প্রাচীনতম ক্ষুদ্র নগর হল জিয়াগঞ্জ । মুর্শিদাবাদ জেলা শিক্ষা , সংস্কৃতি , অর্থনৈতিক , রাজনৈতিক পরিমণ্ডল নিয়ে এই প্রাচীনতম শহরটি হল জিয়াগঞ্জ । আর শিক্ষা সংস্কৃতি এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা প্রাচীন কাল থেকেই উন্নত বলেই  মুর্শিদাবাদ জেলার জিয়াগঞ্জ শহরটি জিয়াগঞ্জ বাসির মনের মণিকোঠায় আকড়ে ধরে আছে ।

        প্রাচীন জাতি ও পরিবারের প্রভাবঃ মুর্শিদাবাদ জেলা একটি বহুধর্মীয় ও বহু জাতির বসবাসকারী শহর বলে গণ্য । তার মধ্যে জিয়াগঞ্জ শহরটি প্রায় প্রাচীনকাল থেকেই বহু জাতির বসবাস লক্ষ্য করা যায় । আমরা এই তথ্য ভারতবর্ষের ইতিহাসের পাতা থেকে জানতে পারি । প্রাচীন প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন থেকে এবং তাদের সাংস্কৃতিক নিদর্শন থেকে জানতে পারি । এবং তাদের পারিবারিক অনেক তথ্য এই জিয়াগঞ্জ শহরে আজও প্রচলিত আছে । এবং সমাজে তার প্রভাব কিঞ্চিৎ মাত্র রয়ে গেছে বর্তমান সমাজে ।

      ভৌগলিক অবস্থানঃ জিয়াগঞ্জ নগরটি মুর্শিদাবাদ জেলার মধ্যস্থানে অবস্থান করেছে । এই শহরটি উত্তরে ২৪.৫৮ ডিগ্রী এবং ৮৮.৫৫ ডিগ্রী অক্ষরেখায় অবস্থান করেছে । জিয়াগঞ্জ শহরটির পশ্চিমদিকে ভাগিরথী নদী বয়ে চলে গেছে – যার অপর প্রান্তে আজিমগঞ্জ শহরটি অবস্থান করেছে এবং পূর্বে জিয়াগঞ্জ রেল স্টেশন অবস্থান করেছে । ভাগিরথী নদীই  জিয়াগঞ্জ - আজিমগঞ্জ শহর দুটিকে পৃথক করেছে এবং শহর দুটির গুরুত্ব আরও বাড়িয়ে দিয়েছে ।

         শিক্ষা ও সংস্কৃতিঃ শিক্ষা ও সংস্কৃতিতে জিয়াগঞ্জ শহরটি শুধু মুর্শিদাবাদ নয় , সারা ভারতবর্ষে  একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করে আছে । এই শহরে দুটি ডিগ্রী কলেজ আছে , যথা – কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত জিয়াগঞ্জ শ্রীপৎ সিং কলেজ  এবং রানি ধন্যা কুমারী কলেজ । এই ডিগ্রী কলেজ দুটি মুর্শিদাবাদের দ্বিতীয় প্রাচীনতম কলেজ । তৎকালীন রাজা শ্রীপৎ সিং এবং তাঁর স্ত্রী  রানি ধন্যা কুমারী কলেজ দুটি প্রতিষ্ঠা করেন, এছাড়া একটি বি.এড. কলেজ ও একটি ডি.এড. কলেজ রয়েছে এবং পশ্চিমবঙ্গের তথ্য প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত টেকনিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ রয়েছে । এছাড়াও এই শহরে প্রচুর পুরনো বিদ্যালয় রয়েছে এই কারনে এই শহরটি শিক্ষা ক্ষেত্রে প্রচুর উন্নতি সাধন করেছে ।

      সংস্কৃতির দিক দিয়েও জিয়াগঞ্জ শহরটি বেশ এগিয়ে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারতবর্ষে । বর্তমানের বিশিষ্ট গায়ক অরিজিৎ সিং এই জিয়াগঞ্জ শহরেরই ছেলে – তিনি এই ছোট্ট শহরেই সঙ্গীত চর্চা করেই ভারতবর্ষে তার সংস্কৃতিকে ছড়িয়ে দিয়েছে । তাছাড়া মুর্শিদাবাদ জেলা যুব উৎসবে জিয়াগঞ্জ – আজিমগঞ্জ ( বাক্যব্যায় দলটি )  নাটকে জেলায় প্রথম স্থান ( ২০১৪ সালে ) অধিকার করেছে । এছাড়াও হাস্যরসিক মীর আজিমগঞ্জ শহরে জন্মগ্রহণ করেছেন । এর ফলে জিয়াগঞ্জ শহরটি সংস্কৃতির ধারক ও বাহক হিসাবে পশ্চিমবঙ্গের গুরুত্ব যায়গা বলে পরিচিত ।

       অর্থনৈতিক অবস্থানঃ জিয়াগঞ্জ শহরটির অর্থনৈতিক অবস্থা খুব একটা ভাল না হলেও বর্তমান পরিস্থিতিতে খারাপ বলা যাবে না । যদিও জিয়াগঞ্জ শহরের অর্থনৈতিক অবস্থা মুর্শিদকুলি খাঁ – র শাসন কালের সময় থেকেই উন্নত মানের । এখানে অনেক রাজা রানী শাসন চালিয়েছেন এবং তাঁরা এখানকার অর্থনীতিকে স্বচ্ছল করে দিয়ে গেছেন ।

        রাজনৈতিক অবস্থানঃ মুর্শিদাবাদ জেলার জিয়াগঞ্জ শহরটি বর্তমানে জিয়াগঞ্জ – আজিমগঞ্জ পৌরসভার অধীনস্থ এবং পৌরসভাটি বামফ্রন্ট পরিচালিত ।  পৌরসভাটি বামফ্রন্ট পরিচালিত হলেও এখানে অন্যান্ন দলেরও প্রভাব রয়েছে যেমনঃ সি.পি.আই.এম. , কংগ্রেস , বিজেপি এবং তৃণমূল কংগ্রেস । এই দল গুলি পৌরসভা পরিচালনা করার সঙ্গে সঙ্গে কলেজ গুলিও পরিচালনা করে তবে , বর্তমানে জিয়াগঞ্জ শ্রীপৎ সিং কলেজ এবং রানি ধন্যা কুমারী কলেজ দুটি ভারতের ছাত্র পরিষদ ( সি.পি. ) পরিচালিত ।

     জীবিকা ও জনসংখ্যাঃ জিয়াগঞ্জ শহরটির জনসংখ্যা এক লক্ষ্যের বেশী । তার ফলে এই শহরটির জনঘনত্ব প্রতি বর্গ কিমিতে ৩০০০- এর বেশী । তাই এই শহরটি জনঘনত্ব পূর্ণ শহর । শহরটির অধিবাসীরা বিভিন্ন ভাবে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে । এখানে যেমন সরকারী চাকুরীজীবী রয়েছে তেমনই রয়েছে দিনমজুর – যারা দৈনিক কাজকর্ম করে তাদের জীবিকা নির্বাহ করে থাকে ।

    পরিকাঠামোগত অবস্থাঃ মুর্শিদাবাদ জেলায় তিনটি লোকসভা রয়েছে তার মধ্যে জিয়াগঞ্জ শহরটি মুর্শিদাবাদ লোকসভার অধীনে, এটি বর্তমানে ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের অধীনস্থ এবং এই শহরটি মুর্শিদাবাদ বিধানসভার অধীনে । তবে এই শহরটি জিয়াগঞ্জ থানার মুর্শিদাবাদ – জিয়াগঞ্জ ব্লকের অন্তর্গত এবং লালবাগ মহকুমা-র অধীনে ।

     চিকিৎসা ব্যবস্থাঃ মুর্শিদাবাদ জেলার প্রাচীন শহর জিয়াগঞ্জের চিকিৎসা ব্যবস্থা আজিমগঞ্জের থেকে একটু বেশী উন্নত হলেও খুব একটা উন্নত নয় । জিয়াগঞ্জে চিকিৎসা কেন্দ্র বলতে একটি সরকারী হাঁসপাতাল যেটি নাম মাত্রই ও আরেকটি জিয়াগঞ্জ লন্ডন মিশন হাঁসপাতাল ( খ্রিষ্টই সেবা সদন ) – ইংরেজ শাসন কালের একটি চিকিৎসাকেন্দ্র, যেটি বর্তমানে জিয়াগঞ্জ – আজিমগঞ্জ পৌরসভা পরিচালনা করছে । এই হাঁসপাতালটি লন্ডন মিশন নার্সিংহোম নামেও পরিচিত । এই নার্সিংহোমটি সম্পুর্ন সরকারী না হওয়ায় এখানে চিকিৎসা করানো খুব ব্যায়বহুল যদিও সমস্ত পরিষেবা পাওয়া যায় না ।

     পরিষেবাঃ জিয়াগঞ্জ শহরটি জিয়াগঞ্জ – আজিমগঞ্জ পৌরসভা বিভিন্ন পরিষেবা দিয়ে এই শহরে একটি সূজনশীল পরিবেশ গড়ে তুলেছে । যেমন সুন্দর রাস্তাঘাট, বিদ্যুৎ পরিষেবা, আর্সেনিক মুক্ত পানীয় জল, পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন পরিবেশ, জল নিকাসি ব্যবস্থা, টেলিফোন পরিষেবা, ছোটো ছোটো শিশু উদ্যান ও খেলার মাঠ । এছাড়া বিভিন্ন নাগরিক পরিষেবা ও প্রশাসনিক পরিষেবা জিয়াগঞ্জ বাসিরা খুব ভালই পেয়ে থাকে ।

  যাতায়াত ব্যবস্থাঃ জিয়াগঞ্জ শহরটি মুর্শিদাবাদ জেলার মধ্যস্থলে অবস্থিত হওয়ার কারনে যাতায়াত ব্যবস্থা খুবই ভাল । এই শহরটি সমতল ভূমি হওয়ায় সড়ক পথ, রেল পথ, ও জল পথ ( ভাগিরথী নদী ধরে ) – এর বিশেষ সুবিধা রয়েছে । এছাড়া জিয়াগঞ্জ এবং আজিমগঞ্জ শহরের সাথে যোগাযোগ নৌপথে হয় ( সদর ঘাট, নিমতলা ঘাট ) ।

    পর্যটন কেন্দ্রঃ মুর্শিদাবাদ জেলা এতিহাসিক পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে ভারতবর্ষের মানচিত্রে চিহ্নিত হয়ে রয়েছে । তবে জিয়াগঞ্জ শহরে পর্যটন কেন্দ্র বলতে রয়েছে কিছু ছোট খাটো মন্দির ( যেমনঃ দাদস্থান মন্দির, কমলে কামেনি মন্দির ) , দু-একটি শিশু উদ্যান , ও দু-একটি পার্ক ( যেমনঃ বর্নালি পার্ক , বাগডহর পার্ক ) । তবে পৌরউদ্যানটি এবং দাদস্থান মন্দিরটি পর্যটন কেন্দ্র রুপে কিছুটা জনপ্রিয়তার শীর্ষে রয়েছে ।

    অভাব ও অসুবিধাঃ ১) জিয়াগঞ্জ শহরটি ‘ডি’ ক্যাটাগরির একটি পৌরসভা হওয়ায় এখানে আমরা নাগরিক পরিষেবা থেকে বঞ্চিত ।
২) এই শহরে বিদ্যুৎ পরিষেবা সমস্ত কোনে পৌঁছে গেলেও অনেক জায়গায় রাস্তায় আলোর অভাব রয়েছে ।
৩) জিয়াগঞ্জ শহরের পথে আর্সেনিক মুক্ত পানীয় জল থাকলেও শহরের প্রতিটি ঘরে এখনো পৌঁছায়নি – এখানকার বেশিরভাগ মানুষ আর্সেনিক যুক্ত জল পান করে ।
৪) জিয়াগঞ্জ শহরে দুটি হাঁসপাতাল থাকলেও – উন্নত মানের চিকিৎসা পদ্ধতি ও ভাল ডাক্তার এখানে নেই, এর জন্য সাধারণ মানুষকে ছুটে যেতে হয় সদর শহর লালবাগ বা বহরমপুর বা কলকাতা ।
৫) এখানে রাজনৈতিক গোলযোগ একটু কম থাকলেও কলেজ গুলিতে ছাত্র রাজনীতিতে মাঝে মাঝে গণ্ডগোল হয়ে থাকে ।
৬) এছাড়াও এখানে বিভিন্ন প্রশাসনিক , রাজনৈতিক সামাজিক কিছু সমস্যা লেগেই থাকে ।


পরিশেষে , অনেক অভাব ও অসুবিধা থাকলেও জিয়াগঞ্জবাসী তাদের এই শহরটিকে নিজের মনের মণিকোঠায় ধরে রেখেছে । 

0 comments: